ভারতের সংবিধান সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ মামলা:

ভারতের সংবিধান সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ মামলা:

ভারতের সংবিধান সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ নজিরবিহীন মামলা যেগুলি দেশের আইনগত ও রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এছাড়াও এই মামলাগুলি ভারতের গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও নাগরিক স্বাধীনতাকে মজবুত করেছে।

সেগুলো নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো – 

কেশবানন্দ ভারতী বনাম কেরালা রাজ্য (১৯৭৩): 

  • গুরুত্ব: মূল গঠন তত্ত্ব (Basic Structure Doctrine) প্রবর্তন করা হয়। 
  • প্রভাব: সংসদ সংবিধান সংশোধন করতে পারে, কিন্তু এর মৌলিক গঠন পরিবর্তন করতে পারে না (যেমন: গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি)।

গোলকনাথ বনাম পাঞ্জাব রাজ্য (১৯৬৭) 

  • গুরুত্ব: সংসদ মৌলিক অধিকার সংশোধন করতে পারে না বলে রায় দেয়। 
  • প্রভাব: সংবিধান সংশোধনে সীমা নির্ধারণ করে; পরবর্তীতে কেশবানন্দ মামলায় রায়টি বাতিল হয়।

মণিকা গান্ধী বনাম ভারত সরকার (১৯৭৮) 

  • গুরুত্ব: সংবিধানের ধারা ২১ (জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার)-এর ব্যাখ্যা বিস্তৃত হয়। 
  • প্রভাব: কোনো নাগরিকের স্বাধীনতা কেবল ন্যায়সঙ্গত, যুক্তিসঙ্গত ও সুষ্ঠু আইন দ্বারাই হরণ করা যাবে।

মিনার্ভা মিলস বনাম ভারত সরকার (১৯৮০) 

  • গুরুত্ব: মূল গঠন তত্ত্ব পুনরায় নিশ্চিত করা হয়। 
  • প্রভাব: মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রীয় নীতির মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করে।

এডিএম জবলপুর বনাম শিবকান্ত শুক্লা (১৯৭৬) 

  • গুরুত্ব: জরুরি অবস্থায় ধারা ২১ স্থগিত রাখা যেতে পারে বলে রায়। 
  • প্রভাব: গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ; পরে এই রায়টি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয় এবং বাতিল করা হয়।

এস.আর. বোম্মাই বনাম ভারত সরকার (১৯৯৪) 

  • গুরুত্ব: রাষ্ট্রপতির শাসন (ধারা ৩৫৬) প্রয়োগে কড়া নির্দেশিকা। 
  • প্রভাব: সংবিধানিক ফেডারাল কাঠামোকে রক্ষা করে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করে।

বিশাখা বনাম রাজস্থান রাজ্য (১৯৯৭) 

  • গুরুত্ব: কর্মস্থলে যৌন হয়রানি মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন বলে গণ্য। 
  • প্রভাব: ‘বিশাখা নির্দেশিকা’ প্রবর্তিত হয় — পরবর্তীতে আইন আকারে রূপান্তরিত হয়। 

পুত্তস্বামী বনাম ভারত সরকার (২০১৭) 

  • গুরুত্ব: গোপনীয়তার অধিকার (Right to Privacy) মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হয়। 
  • প্রভাব: নাগরিকদের তথ্য সুরক্ষা, আধার বিতর্ক ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

শায়রা বানো বনাম ভারত সরকার (২০১৭) 

  • গুরুত্ব: তিন তালাক (Triple Talaq) অবৈধ ঘোষণা। 
  • প্রভাব: মুসলিম নারীর অধিকারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

নবতেজ সিং জোহর বনাম ভারত সরকার (২০১৮) 

  • গুরুত্ব: সমকামিতার অপরাধীকরণকারী ধারা ৩৭৭ বাতিল। 
  • প্রভাব: এলজিবিটিকিউ + অধিকারে ঐতিহাসিক অগ্রগতি। 

জোসেফ শাইন বনাম ভারত সরকার (২০১৮) 

  • গুরুত্ব: ব্যভিচার আইন (ধারা ৪৯৭) অসাংবিধানিক ঘোষণা। 
  • প্রভাব: নারী ও পুরুষের সমতা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা পায়। 

এই পোস্টের PDF পেতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন: 👇

Post Comment