সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার: (History, characteristics and important discoveries of the Indus Valley Civilization:).

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতা

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার: (History, characteristics and important discoveries of the Indus Valley Civilization:).

Table of Contents

সূচনা:

মানবসভ্যতার ইতিহাসে ভারতবর্ষের প্রাচীনতম ও অন্যতম উন্নত সভ্যতা হল সিন্ধু সভ্যতা। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে সিন্ধু নদ ও তার উপনদীগুলির উভয় তীরে যে নগরজীবন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল, তা মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। এই সভ্যতা ছিল তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগের এক চমৎকার উদাহরণ, যা নগর পরিকল্পনা, স্থাপত্য, নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও বাণিজ্যিক দক্ষতায় সমৃদ্ধ।

প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে এই সময়কালকে বলা হয় “প্রত্নঐতিহাসিক যুগ” (Proto-historical Period)। কারণ, এই যুগে মানুষ লিখতে শিখেছিল, কিন্তু সেই লিপির পাঠোদ্ধার এখনো পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। ফলে এটি প্রাগৈতিহাসিক যুগ (Pre-history) থেকে ইতিহাসের যুগে উত্তরণের একটি সংযোগ পর্ব হিসেবে ধরা হয়।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার বিস্তার ও পরিধি:

সিন্ধু সভ্যতার বিস্তার ছিল বিশাল। এটি মূলত বর্তমান পাকিস্তান ও ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশজুড়ে ছড়িয়ে ছিল। সিন্ধু নদীর উপত্যকা ও তার উপনদীগুলির তীরে এই সভ্যতার বিকাশ ঘটে। বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে প্রায় ১০২২টি কেন্দ্রের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৬১৬টি ভারতবর্ষে এবং ৪০৪টি পাকিস্তানে অবস্থিত।

সিন্ধু সভ্যতার বিস্তৃতি ছিল প্রায় ১৩৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১০৫০ কিলোমিটার প্রস্থ, অর্থাৎ প্রায় ৬.৮ থেকে ৮ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে। এটি উত্তর দিকে কাশ্মীর থেকে দক্ষিণে নর্মদা নদীর অববাহিকা পর্যন্ত, এবং পশ্চিমে বালুচিস্তান থেকে পূর্বে পশ্চিম উত্তর প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

এত বিশাল ভৌগোলিক পরিসরে বিস্তৃত হওয়ায় একে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ব্রোঞ্জযুগীয় সভ্যতা হিসেবে গণ্য করা হয়। অনেক ইতিহাসবিদ একে “সিন্ধু-ঘাঘর-হাকড়া সভ্যতা” (Indus-Ghaggar-Hakra Civilization) অথবা “সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতা” (Indus-Saraswati Civilization) নামেও উল্লেখ করেছেন।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার প্রধান স্থান ও আবিষ্কারের ক্ষেত্র:

সিন্ধু সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্র বর্তমান ভারত, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের অংশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিল। নিচে তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের নাম দেওয়া হলো —

দিকস্থানবর্তমান অবস্থান
উত্তরতম স্থানমান্ডা (Manda)জম্মু ও কাশ্মীর
দক্ষিণতম স্থানমালভান (Malvan) / দৈমাবাদ (Daimabad)মহারাষ্ট্র
পূর্বতম স্থানআলমগীরপুর (Alamgirpur)পশ্চিম উত্তর প্রদেশ
পশ্চিমতম স্থানসুতকাজেন্ডোর (Sutkagendor)বালুচিস্তান
বিচ্ছিন্ন কেন্দ্রশতঘাই (Shortughai)আফগানিস্তান

এছাড়া মহেঞ্জোদাড়ো (Mohenjo-daro), হরপ্পা (Harappa), লোথাল (Lothal), কালীবঙ্গান (Kalibangan), ধোলাভিরা (Dholavira) প্রভৃতি স্থান ছিল এই সভ্যতার অন্যতম প্রধান নগরকেন্দ্র।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার আবিষ্কার:

সিন্ধু সভ্যতার প্রথম আবিষ্কৃত স্থান হল হরপ্পা। তাই একে অনেকে ‘হরপ্পা সভ্যতা’ নামেও অভিহিত করেন।

  • ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ পর্যটক চার্লস ম্যাসন (Charles Mason) প্রথম এই অঞ্চলে একটি প্রাচীন সভ্যতার ইঙ্গিত দেন।
  • ১৮৩১ সালে কর্নেল আলেকজান্ডার বার্নেস সেই ইঙ্গিতকে সমর্থন করেন।
  • ১৮৫৩ ও ১৮৫৭ সালে বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার ক্যানিংহাম এই স্থান পরিদর্শন করেন। তিনি ছিলেন Archaeological Survey of India (ASI)-এর প্রথম অধিকর্তা
  • পরবর্তীকালে ১৯২০ সালে দয়ারাম সাহানী (Daya Ram Sahni) হরপ্পা স্থানটির প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু করেন।
  • সে সময় স্যার জন মার্শাল (John Marshall) ছিলেন ASI-এর পরিচালক।

খুবই দুঃখজনকভাবে, হরপ্পা সভ্যতার বহু ইট করাচী-লাহোর রেলপথ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল, ফলে অনেক মূল্যবান স্থাপত্যের ক্ষতি হয়।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার সময়কাল:

সিন্ধু সভ্যতার বিস্তারকাল আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০০ থেকে ১৩০০ অব্দ পর্যন্ত।
রেডিও কার্বন ডেটিং অনুযায়ী সভ্যতার প্রধান সময়কাল খ্রিষ্টপূর্ব ২৩‍০০–১৭৫০

সাধারণত এই সভ্যতাকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয় —

পর্যায়সময়কাল (খ্রিষ্টপূর্ব)বৈশিষ্ট্য
প্রাক-হরপ্পা (Early Harappa)৩২০০–২৬০০গ্রামীণ জীবন, নগরায়ণের প্রাথমিক ধাপ
পরিপূর্ণ হরপ্পা (Mature Harappa)২৬০০–১৯০০উন্নত নগরজীবন, বাণিজ্য ও কারুশিল্পের বিকাশ
উত্তর হরপ্পা (Late Harappa)১৯০০–১৩০০সভ্যতার পতন, সংস্কৃতির বিলুপ্তি

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা (Urban Planning of Indus Valley Civilization).

সিন্ধু সভ্যতা (Indus Valley Civilization) ছিল পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন নগরসভ্যতা, যার সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ থেকে ১৩০০ অব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সভ্যতার নগর পরিকল্পনা এতটাই উন্নত ছিল যে, আধুনিক নগরব্যবস্থাও তার তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল। হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়ো, ধোলাভিরা, কালীবঙ্গান, লোকাল, বানওয়ালি ইত্যাদি নগরগুলি এই উন্নত পরিকল্পনার বাস্তব উদাহরণ।

পরিকল্পিত নগর নির্মাণ:

সিন্ধু সভ্যতার নগরগুলি পরিকল্পিতভাবে নির্মিত হয়েছিল। প্রতিটি শহরই একটি নির্দিষ্ট নকশা অনুযায়ী তৈরি — যেখানে রাস্তা, বাড়ি, নিকাশিনালী, এবং জনসাধারণের ভবন সব কিছুই সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো। এই শহরগুলির কেন্দ্রভাগে ছিল উঁচু দুর্গ বা “দুর্গকোট” (Citadel), আর নিচে ছিল “নিম্ননগর” (Lower Town), যেখানে সাধারণ মানুষ বাস করত।

দুর্গকোট অংশে প্রশাসনিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম চলত এবং সেখানে পাওয়া গেছে শস্যভাণ্ডার, স্নানাগার, ও প্রহরী ব্যবস্থার প্রমাণ।

রাস্তার বিন্যাস:

নগরের রাস্তাগুলি ছিল সরলরেখায় এবং একে অপরের সাথে সমকোণে (Right Angle) ছেদ করেছে। এই রাস্তাগুলির প্রস্থ ছিল প্রায় ৯ থেকে ৩৪ ফুট পর্যন্ত। প্রধান রাস্তার দু’পাশে ছিল বসতবাড়ি, আর রাস্তার ধার দিয়ে চলত নিকাশিনালী।

এই সুষম রাস্তার বিন্যাসই “Grid Pattern Planning” নামে পরিচিত, যা আধুনিক নগর পরিকল্পনারও ভিত্তি।

নিকাশিনালী ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা:

সিন্ধু সভ্যতার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল এর অত্যন্ত উন্নত নিকাশিনালী ব্যবস্থা (Drainage System)। প্রতিটি বাড়ি থেকে নির্দিষ্ট চ্যানেল দিয়ে বর্জ্য জল প্রধান নিকাশিনালীর সাথে যুক্ত হতো। এই নিকাশিনালী ইটের তৈরি এবং ঢাকনা দেওয়া ছিল।

নিয়মিত পরিস্কারের জন্য জায়গায় জায়গায় খোলা অংশ রাখা হতো। এমনকি কিছু নিকাশিনালীতে স্যুয়ার ক্লিনিং চেম্বারেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। এটি প্রমাণ করে যে, এই সভ্যতার মানুষ পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন ছিল।

বসতবাড়ির গঠন:

বেশিরভাগ বাড়ি পোড়ামাটির ইটে তৈরি ছিল। বাড়িগুলির মধ্যে ২ থেকে ৩ তলা পর্যন্ত নির্মাণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রত্যেক বাড়িতেই ছিল—

  • উঠান (Courtyard)
  • বাথরুম ও নিকাশিনালী সংযোগ
  • কখনও কখনও কুয়ো (Well)
  • আলাদা কক্ষ ও সংরক্ষণাগার

বাড়িগুলি বাইরের দিকে বন্ধ ও ভেতরের দিকে খোলা ছিল, যা গোপনীয়তা ও আরামের জন্য করা হয়েছিল।

মহেঞ্জোদাড়ো শহরে প্রায় প্রতিটি ঘরের সাথে সংযুক্ত ছিল ব্যক্তিগত স্নানঘর, যা সেই সময়ের জন্য আশ্চর্যজনক।

প্রধান স্থাপনা:

সিন্ধু সভ্যতার শহরগুলিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জনসাধারণের ভবন পাওয়া গেছে—

  1. মহেঞ্জোদাড়োর বৃহৎ স্নানাগার (Great Bath):
    এটি প্রায় ৩৯ ফুট লম্বা, ২৩ ফুট চওড়া এবং ৮ ফুট গভীর একটি পুল, যেটি ইট ও পিচ দিয়ে তৈরি। ধর্মীয় বা সামাজিক স্নানের জন্য ব্যবহৃত হতো বলে ধারণা করা হয়।
  2. শস্যভাণ্ডার (Granary):
    হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়ো ও ধোলাভিরায় বিশাল শস্যভাণ্ডারের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলি ছিল শস্য সংরক্ষণ ও বাণিজ্যের কেন্দ্র।
  3. সমাবেশ ঘর (Assembly Hall):
    কিছু স্থানে এমন ভবন পাওয়া গেছে, যা প্রশাসনিক বৈঠক বা সামাজিক অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হতো।

জল সংরক্ষণ ও কুয়ো:

সিন্ধু সভ্যতার শহরগুলিতে প্রচুর সংখ্যক কুয়োর সন্ধান মেলে। মহেঞ্জোদাড়ো শহরে প্রায় ৭০০টিরও বেশি কুয়ো পাওয়া গেছে। এতে বোঝা যায় যে, তারা জল সংরক্ষণ ও ব্যবহারের উন্নত কৌশল জানত।

ধোলাভিরায় বৃষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য বিশেষ জলাধার (Reservoir) ও বাঁধ (Dam) ব্যবস্থাও দেখা যায়।

দুর্গ ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা:

শহরের উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত দুর্গকোট অংশ ছিল শক্ত প্রাচীরবেষ্টিত, যা প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হতো। এই অংশেই ছিল শাসক শ্রেণির বাসস্থান ও প্রশাসনিক ভবন।

প্রাচীরগুলি কাদা ও পোড়ামাটির ইটে তৈরি এবং অনেক স্থানে দ্বৈত প্রাচীরের (Double Wall) প্রমাণও মেলে।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য:

বৈশিষ্ট্যবর্ণনা
নগর কাঠামোদুর্গকোট ও নিম্ননগর — দুই ভাগে বিভক্ত
রাস্তাগ্রিড-প্যাটার্নে নির্মিত, সমকোণ ছেদযুক্ত
নিকাশিনালীইটের, ঢাকনাযুক্ত, পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা
বাড়িঘরপোড়ামাটির ইটে নির্মিত, কুয়ো ও বাথরুমযুক্ত
বৃহৎ স্থাপনাGreat Bath, Granary, Assembly Hall
জলব্যবস্থাকুয়ো, রিজার্ভার ও বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ব্যবস্থা
প্রাচীরপ্রতিরক্ষামূলক দুর্গ প্রাচীর

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার প্রধান সাইট ও আবিষ্কারক (Important Sites and Discoverers of Harappan Civilization).

ক্র. নংসাইটের নাম (Site)বর্তমান অবস্থান (Present Location)আবিষ্কারক (Discoverer)আবিষ্কারের সাল (Year of Discovery)উল্লেখযোগ্য নিদর্শন / বিশেষত্ব (Important Findings)
1হরপ্পা (Harappa)পাঞ্জাব, পাকিস্তানদয়ারাম সাহানী (Daya Ram Sahni)1920দানাগুদাম, শস্যাগার, পাকা ইটের ঘর, মৃৎপাত্র
2মহেঞ্জোদাড়ো (Mohenjo-daro)সিন্ধ, পাকিস্তানআর. ডি. ব্যানার্জি (R. D. Banerjee)1922গ্রেট বাথ, মূর্তি, মৃৎশিল্প, নিষ্কাশন ব্যবস্থা
3কালীবঙ্গান (Kalibangan)রাজস্থান, ভারতবি. বি. লাল ও বি. কে. ঠাপার (B. B. Lal & B. K. Thapar)1953কৃষিক্ষেত্রের দাগ, অগ্নিবেদী, ইটের রাস্তা
4লোথাল (Lothal)গুজরাট, ভারতএস. আর. রাও (S. R. Rao)1957ডকইয়ার্ড, গুদামঘর, সিলমোহর, বাণিজ্যের প্রমাণ
5ধোলাভিরা (Dholavira)কচ্ছ, গুজরাটজে. পি. যোশি (J. P. Joshi)1967–68নগর পরিকল্পনা, জলাধার, লিপি ফলক
6চানহুদারো (Chanhu-daro)সিন্ধ, পাকিস্তানএন. জি. মজুমদার (N. G. Majumdar)1931গহনা কারখানা, মৃৎশিল্প, সিলমোহর
7বনওয়ালি (Banawali)হরিয়ানা, ভারতআর. এস. বিষ্ট (R. S. Bisht)1974–75দুর্গ, শস্যাগার, কৃষিজ যন্ত্রপাতি
8আলমগীরপুর (Alamgirpur)উত্তর প্রদেশ, ভারতইয়াসিন ধীরাজ লাল (Y. D. Sharma)1958মৃৎপাত্র, ইটের ঘর, পরবর্তী হরপ্পা নিদর্শন
9রাখিগরহি (Rakhigarhi)হরিয়ানা, ভারতআমরেন্দ্র নাথ (Amrendra Nath)1963–65হরপ্পা নগরকাঠামো, বাসস্থান, ধাতব সামগ্রী
10সুতকাগেন্ডোর (Sutkagendor)বালুচিস্তান, পাকিস্তান সীমান্তেআর. স্টেইন (A. Stein)1928–29উপকূলীয় বন্দর, বাণিজ্যকেন্দ্র
11কোত দিজি (Kot Diji)সিন্ধ, পাকিস্তানএফ. এ. খান (F. A. Khan)1955দুর্গ প্রাচীর, প্রাক-হরপ্পা নিদর্শন
12দৈমাবাদ (Daimabad)মহারাষ্ট্র, ভারতএস. আর. রাও / ম. কে. ধাবলকার (S. R. Rao / M. K. Dhavalikar)1958তাম্র মূর্তি, পশু প্রতিকৃতি, দেরি হরপ্পা নিদর্শন
13সুরকোটাডা (Surkotada)গুজরাট, ভারতজে. পি. যোশি (J. P. Joshi)1964ঘোড়ার হাড়, দুর্গ প্রাচীর
14রূপার (Ropar)পাঞ্জাব, ভারতইয়াসিন ধীরাজ লাল (Y. D. Sharma)1953মানব সমাধি, পরবর্তী হরপ্পা নিদর্শন
15শতঘাই (Shortughai)আফগানিস্তানফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক মিশন1976সিন্ধু সভ্যতার উত্তরতম কেন্দ্র, বাণিজ্যের প্রমাণ

এসব প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্রের আবিষ্কার ভারতের ইতিহাসে প্রাচীন নগরজীবনের এক গৌরবময় অধ্যায় উন্মোচিত করেছে।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা ও স্থাপত্য:

হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়ো শহর দুটি ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। শহরগুলি উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম অক্ষে বিভক্ত সোজা রাস্তায় নির্মিত ছিল।

  • প্রতিটি শহরকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হত — দুর্গ (Citadel)নিম্ন শহর (Lower Town)
  • দুর্গে ছিল প্রশাসনিক কেন্দ্র ও গুদামঘর, আর নিম্ন শহরে বসবাস করত সাধারণ নাগরিকরা।
  • পাকা ইটের বাড়ি, সঠিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা, কূপ, ও জলাধার এই সভ্যতার নগর জীবনের প্রমাণ বহন করে।
  • মহেঞ্জোদাড়োর ‘গ্রেট বাথ’ ছিল এক প্রাচীন স্নানাগার, যা সম্ভবত ধর্মীয় বা সামাজিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হত।

এই সভ্যতার শহরগুলিতে নিষ্কাশন ব্যবস্থা (Drainage System) এত উন্নত ছিল যে, অনেক আধুনিক নগরকেও হার মানায়।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প:

সিন্ধু সভ্যতার অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর ছিল। গম, যব, তিল, খেসারি ও তুলা ছিল প্রধান ফসল।
তাঁত, মৃৎশিল্প, ধাতু ও গহনা নির্মাণ ছিল এই সভ্যতার অন্যতম শিল্পক্ষেত্র।

এছাড়া, মেসোপটেমিয়া, পারস্য ও আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
লোথাল বন্দরের খননে একটি ডকইয়ার্ড আবিষ্কৃত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ইঙ্গিত দেয়।
সিন্ধু সভ্যতার মানুষরা ওজন ও পরিমাপের জন্য মানক পাথর ব্যবহার করত — যা তাদের উচ্চ সংগঠনশক্তির নিদর্শন।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার ধর্ম ও সংস্কৃতি:

সিন্ধু সভ্যতার ধর্মীয় জীবন ছিল প্রকৃতিনির্ভর। তারা বৃক্ষ, প্রাণী ও প্রজননশক্তির পূজা করত।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা যায়, তারা সম্ভবত ‘মাতা দেবী’ বা ‘প্রজনন দেবী’-র উপাসনা করত।
কিছু মূর্তিতে পশুপতি সদৃশ দেবতার চিত্র পাওয়া যায়, যা অনেক গবেষক প্রাচীন শিব-এর প্রতীক বলে মনে করেন। তারা মৃতদের সমাধি দিত মাটির নিচে, এবং কিছু ক্ষেত্রে সমাধির সঙ্গে ব্যবহৃত সামগ্রীও রাখত।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার লিপি ও ভাষা:

সিন্ধু সভ্যতার মানুষ একটি নিজস্ব লিপি ব্যবহার করত, যা এখনো পুরোপুরি পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই লিপিটি ছিল চিহ্নভিত্তিক (Pictographic), এবং প্রায় ৪০০–৪৫০টি প্রতীকের ব্যবহার দেখা যায়। লিপিটি ডান থেকে বাম দিকে লেখা হত বলে প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার প্রাপ্ত প্রত্নবস্তু ও স্থানসমূহ:

ক্র. নংস্থান (Site)বর্তমান অবস্থানপ্রধান প্রত্নবস্তু / আবিষ্কারআবিষ্কারকআবিষ্কারের সাল
1হরপ্পা (Harappa)পাকিস্তান (পাঞ্জাব প্রদেশ)শস্যভাণ্ডার, মুদ্রা, খেলনা গাড়ি, মৃৎপাত্র, অলঙ্কার, গৃহস্থালী সামগ্রীদয়ারাম সাহানী (Daya Ram Sahni)1920
2মহেঞ্জোদাড়ো (Mohenjodaro)পাকিস্তান (সিন্ধ প্রদেশ)বৃহৎ স্নানাগার (Great Bath), Assembly Hall, মূর্তি, ব্রোঞ্জ নৃত্যরত নারী (Dancing Girl), পুরোহিত-রাজ মূর্তিআর. ডি. ব্যানার্জি (R.D. Banerjee)1922
3চানহুদারো (Chanhudaro)পাকিস্তান (সিন্ধ)মনুষ্য ও পশুর মূর্তি, গহনা তৈরির প্রমাণ, খেলনা, কাচের দানাএন.জি. মাজুমদার (N.G. Majumdar)1931
4লোকাল (Lothal)গুজরাট (ভারত)নৌ-বন্দর (Dockyard), গুদামঘর, শস্য সংরক্ষণাগার, মুদ্রা, দানা প্রস্তুত কারখানাএস. আর. রাও (S.R. Rao)1954
5ধোলাভিরা (Dholavira)গুজরাট (ভারত)বিশাল জলাধার (Reservoir), নগর পরিকল্পনা, প্রাচীর, লিপি ফলক, শিলালিপিআর. এস. বিশ্বাস (R.S. Bisht)1989
6কালীবঙ্গান (Kalibangan)রাজস্থান (ভারত)অগ্নিবেদী (Fire Altars), কৃষিক্ষেত্রের চিহ্ন, মৃৎপাত্র, মুদ্রাবি. বি. লাল ও বি.কে. ঠাপার (B.B. Lal & B.K. Thapar)1953
7বানওয়ালি (Banawali)হরিয়ানা (ভারত)দুর্গ প্রাচীর, শস্য সংরক্ষণাগার, মৃৎপাত্র, অলঙ্কারআর. এস. বিশ্ট (R.S. Bisht)1974
8আলমগীরপুর (Alamgirpur)উত্তর প্রদেশ (ভারত)পোড়ামাটির মৃৎপাত্র, অলঙ্কার, ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষযশোধনান্দন সাহানী (Y.D. Sharma)1958
9সুতকাগেন্ডোর (Sutkagendor)বালুচিস্তান (পাকিস্তান)বন্দর নগরীর নিদর্শন, মৃৎপাত্র, বাণিজ্যিক সামগ্রীস্টেইন (Aurel Stein)1927
10দাইমাবাদ (Daimabad)মহারাষ্ট্র (ভারত)ব্রোঞ্জ রথ, গরু, মানুষ ও পশুর মূর্তিএস.এম. কোর্ডে (S.M. Korde)1958
11রাখিগরহি (Rakhigarhi)হরিয়ানা (ভারত)বৃহৎ শহর কাঠামো, ঘরবাড়ি, মৃৎপাত্র, মানব কঙ্কালঅমরেন্দ্র নাথ (Amrendra Nath)1997
12শর্তুগাই (Shortughai)আফগানিস্তানল্যাপিস লাজুলি বাণিজ্যের প্রমাণ, সিন্ধু লিপির মুদ্রাফরাসি প্রত্নতত্ত্ব মিশন1976

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার বিশেষ উল্লেখযোগ্য প্রত্নবস্তু:

প্রত্নবস্তুর নামপাওয়া স্থানতাৎপর্য
নৃত্যরত নারী মূর্তি (Dancing Girl)মহেঞ্জোদাড়োশিল্পকলার উৎকর্ষ ও ধাতুশিল্পের নিদর্শন
পুরোহিত-রাজ মূর্তি (Priest King)মহেঞ্জোদাড়োশাসনব্যবস্থা ও ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতীক
Great Bathমহেঞ্জোদাড়োসামাজিক-ধর্মীয় শুচিতার প্রমাণ
Dockyardলোকালসামুদ্রিক বাণিজ্যের উৎকর্ষ
Fire Altarsকালীবঙ্গানধর্মীয় আচার ও অগ্নিপূজার নিদর্শন
Granaryহরপ্পা, লোকালকৃষি ও খাদ্যসংরক্ষণের প্রমাণ
Scripted Sealsহরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়োপ্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগের মাধ্যম
Water Reservoirধোলাভিরাউন্নত জল ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির নিদর্শন

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ: (Causes of the Decline of the Indus Valley Civilization)

খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০০ থেকে ১৩০০ অব্দ পর্যন্ত টিকে থাকা সিন্ধু সভ্যতা ছিল প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম বিস্ময়কর নগরসভ্যতা। কিন্তু হঠাৎ করেই এই উন্নত সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যায়, এবং প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০০ অব্দের পর এর সমস্ত কেন্দ্র ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হতে থাকে। ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই সভ্যতার পতনের পিছনে একাধিক কারণ উল্লেখ করেছেন। কোনো একক কারণ নয়, বরং বহু প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণ মিলেই এই মহৎ সভ্যতার অবসান ঘটায়।

১. প্রাকৃতিক বিপর্যয়:

সিন্ধু সভ্যতার প্রধান কেন্দ্রগুলি নদী তীরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। অনেক স্থানে বন্যা ও ভূমিকম্পের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মহেঞ্জোদাড়ো অঞ্চলে বারংবার বন্যার প্রমাণ পাওয়া যায় — মাটির স্তরের উপর স্তরে পলি জমে থাকা এই সত্যকে সমর্থন করে। এছাড়া নদীর প্রবাহপথ পরিবর্তনের ফলে চাষযোগ্য জমি হারিয়ে যায় এবং পানির অভাব দেখা দেয়। কিছু অঞ্চলে দীর্ঘ খরার (Drought) কারণেও জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। এসব প্রাকৃতিক পরিবর্তন সভ্যতার স্থায়িত্ব নষ্ট করে দেয়।

২. জলবায়ু পরিবর্তন ও মরুভূমি প্রসার:

প্রত্নতাত্ত্বিক ও ভূগোলবিদদের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দের দিকে উত্তর-পশ্চিম ভারতের জলবায়ু ধীরে ধীরে শুষ্ক হতে শুরু করে। এর ফলে কৃষিনির্ভর সমাজে উৎপাদন হ্রাস পায়। ঘনবসতিপূর্ণ নগরগুলিতে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। নদীগুলির পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এবং বর্ষার পরিমাণ কমে যাওয়ায় কৃষির উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। ফলে মানুষ ধীরে ধীরে শহর ত্যাগ করে ছোট ছোট গ্রামীণ এলাকায় বসতি স্থাপন করতে শুরু করে।

৩. নদীর গতিপথ পরিবর্তন:

সিন্ধু সভ্যতার জীবনযাত্রা ছিল মূলত নদীনির্ভর। গবেষণায় দেখা গেছে, একসময় প্রবাহমান সরস্বতী নদী (Ghaggar-Hakra system) ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় বা দিক পরিবর্তন করে। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে কৃষিজমি অনুর্বর হয়ে পড়ে এবং পানির অভাব দেখা দেয়। এই পরিবর্তন সভ্যতার অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে, যার ফলে জনবসতি ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

৪. আর্যদের আক্রমণ:

অনেক ইতিহাসবিদ যেমন মর্টিমার হুইলার (Mortimer Wheeler) মনে করেন, আর্যদের আক্রমণও সিন্ধু সভ্যতার পতনের একটি কারণ হতে পারে। মহেঞ্জোদাড়ো অঞ্চলে কিছু মানবকঙ্কাল পাওয়া গেছে, যা হঠাৎ মৃত্যুর ইঙ্গিত দেয়। আর্যরা যখন উত্তর-পশ্চিম ভারতবর্ষে প্রবেশ করে, তখন তারা স্থানীয় ড্রাবিড় জনগোষ্ঠীকে আক্রমণ ও বিতাড়িত করে। যদিও এই তত্ত্বটি বর্তমানে বিতর্কিত, তবুও অনেকে মনে করেন যে আর্যদের আগমন সভ্যতার অবশিষ্ট জনগোষ্ঠীকে দক্ষিণ দিকে সরিয়ে দেয়।

৫. অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক পতন:

হরপ্পা সভ্যতা বাণিজ্যনির্ভর ছিল। মেসোপটেমিয়া, পারস্য ও আফগানিস্তানের সঙ্গে নিয়মিত বাণিজ্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু মেসোপটেমিয়ার উর শহরের পতনের পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে হরপ্পার অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে। বাণিজ্যের পতন ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংকট শহরের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যাহত করে। ফলে নগরজীবনের অবক্ষয় ঘটে।

৬. নগরায়ণের অবক্ষয় ও সামাজিক পরিবর্তন:

হরপ্পা সভ্যতার মানুষের জীবনধারা ছিল নগরভিত্তিক। কিন্তু প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক কারণে শহরগুলি ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। মানুষ ছোট ছোট গ্রামে বসতি স্থাপন করে কৃষিনির্ভর জীবনে ফিরে যায়।এই পরিবর্তনের ফলে নগর সংস্কৃতি, শিল্প ও স্থাপত্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। এক অর্থে বলা যায়, সভ্যতা পুরোপুরি ধ্বংস না হয়ে গ্রামীণ রূপে পরিবর্তিত হয়েছিল।

৭. রোগব্যাধি ও মহামারি:

কিছু প্রত্নতাত্ত্বিকের মতে, ঘনবসতিপূর্ণ শহরে নোংরা জল ও আবর্জনার কারণে রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছিল।
বিশেষ করে মহেঞ্জোদাড়ো শহরে অসংখ্য কঙ্কাল একসঙ্গে পাওয়া গেছে, যা হয়তো কোনো মহামারির ইঙ্গিত বহন করে।
রোগব্যাধি জনসংখ্যা হ্রাস ও সামাজিক দুর্বলতার কারণ হয়ে সভ্যতার পতনে ভূমিকা রাখে।

উপসংহার:

সিন্ধু সভ্যতা ছিল ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের গর্বিত সূচনা। এর নগরায়ণ, স্থাপত্য, বাণিজ্য ও সামাজিক জীবন ছিল অত্যন্ত উন্নত। যদিও এই সভ্যতা বিলুপ্ত হয়েছে বহু হাজার বছর আগে, কিন্তু এর নিদর্শন আজও মানবসভ্যতার বিকাশগাথা বর্ণনা করে।
সিন্ধু সভ্যতা শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বের সভ্যতার ইতিহাসে এক অনন্য উদাহরণ — যা মানব বুদ্ধি, পরিশ্রম ও সৃজনশীলতার এক চিরন্তন স্মারক।

Protijogita.in শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে তৈরি। আমি সুকান্ত দাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে এম.এ করেছি এবং শিক্ষকতা করি। এই ওয়েবসাইটে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রশ্নোত্তর, মক টেস্ট, এবং দরকারি অধ্যয়ন সামগ্রী প্রদান করা হয়।

Post Comment

error: Content is protected !!