মুঘল সাম্রাজ্য: ইতিহাস, সম্রাট ও শাসন ব্যবস্থা: mughal-samrajya-itihas-samrat-o-shashon-babostha.

মুঘল সাম্রাজ্য

মুঘল সাম্রাজ্য: ইতিহাস, সম্রাট ও শাসন ব্যবস্থা: mughal-samrajya-itihas-samrat-o-shashon-babostha.

মুঘল সাম্রাজ্য ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম দিকের ইসলামী শাসন। মুঘল সাম্রাজ্য ১৫২৬ সালে বাবর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে জানা যায়। বর্তমানে আফগানিস্তানে অবস্থিত ফারগানা প্রদেশের একজন শাসক বাবর মুঘল রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মুঘল সম্রাটের মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশ ভারতে মুসলিম সংস্কৃতির একটি নতুন উত্থান দেখেছিল। মুঘল রাজবংশ ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাথমিক ইসলামী যুগ। মুঘল রাজবংশের মাধ্যমে ভারতে প্রকৃত ও শক্তিশালী মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই রাজবংশের মহান রাজাদের মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতি, ভাস্কর্য এবং ধর্ম বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। মুঘল সম্রাট ছিলেন মধ্যযুগীয় ভারতের সবচেয়ে বড় এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট। ১৬০০ সালের শেষের দিকে মুঘল সম্রাট সর্বাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক আধিপত্য পেয়েছিলেন।

Table of Contents

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা:

মুঘল সম্রাট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জহিরুদ্দিন মোহাম্মদ বাবর। যার জন্ম আফগানিস্তানে। তাঁর পিতার নাম উমর শেখ মির্জা এবং মাতার নাম কুতলুগ নিগার খাতুম। তিনি ১২ বছর বয়সে ফোরগানার শাসক হিসাবে নিযুক্ত হন। দৌলত খান লোদি বাবরকে ভারত আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং ভারত আক্রমণ করেন। ১৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবর ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করেন। এভাবে তিনি ভারতে মুঘল শাসনের ভিত্তি স্থাপন করেন।

বাবর (১৫২৬-১৫৩০ খ্রিঃ):

জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ছিলেন পিতার দিকে তৈমুরলঙ্গের বংশধর। মাতা চেঙ্গিস খাঁর বংশধর। বাবর ছিল চাঘতাই তুর্কি জাতির অন্তর্ভুক্ত মুঘল। তিনি ছিলেন ফরগনা (আফগানিস্থান) রাজের শাসন কর্তা। তাঁর পিতা উমর শেখ মির্জা মারা যাওয়ার পর মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি সম্রাট হন। বাবরকে তার সততার জন্য ‘কালান্ডার‘ বলা হত। তাকে ভারত আক্রমণের জন্য আহ্বান জানিয়েছিল দৌলত খাঁ লােদী (পাঞ্জাবের সুবাদার),(ইব্রাহিম লােদীর কাকা) এবং রানা সিংহ।

  • ১৫২৬ খ্রিঃ প্রথম পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লােদীকে পরাজিত করে দিল্লি দখল করেন। ইব্রাহিম লােদী লক্ষাধিক সেনাবাহিনী থাকলেও মাত্র বারাে হাজার সেনা নিয়ে ‘রুমি’ ও ‘তুলঘলমা’ নামক যুদ্ধ পদ্ধতি ব্যবহার করে যুদ্ধে জয়লাভ করে। তার এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল উস্তাদ আলি ও মুস্তফা।
  • ১৫২৭ খ্রিঃ ঘানুয়ার যুদ্ধে সংগ্রাম সিংহকে পরাজিত করে রাজপুত রাজ্য দখল করেন। এর ফলে বাবরের সাম্রাজ্য শক্তিশালী হয়। এই যুদ্ধের পর তিনি ‘গাজি’ উপাধি ধারণ করেন।
  • ১৫২৮ খ্রিঃ চান্দ্রেরী যুদ্ধে অন্য রাজপুত রাজা মেদিনিরাই কে পরাজিত করে চান্দেরী দুর্গ দখল করেন।
  • ১৫২৯ খ্রিঃ ঘর্ঘরা যুদ্ধে আফগান রাজা মামুদ লােদীকে (ইব্রাহিম লােদীর ভাই) পরাজিত করে।
  • ৩০ ডিসেম্বর ১৫৩০ খ্রিঃ আগরার আরামবাগে তার মৃত্যু হয়। তার দেহ নিয়ে যাওয়া হয় আরামবাগ থেকে কাবুলে, সেখানে তাকে সমাধিত করা হয়।
  • বাবর তুর্কি ভাষায় তার আত্মজীবনী ‘তুজুক–ই –বাবরি‘ লিখেছিলেন এটি ছিল ক্লাসিক সাহিত্য। বাবরকে বলাহত প্রথম রাতের কবি।

হুমায়ুন(১৫৩০-৪০ এবং ১৫৫৫-৫৬ খ্রিঃ):

হুমায়ুন কাবুলে ১৫০৮ খ্রিঃ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বাবর এবং মাতা ছিলেন মহিম বেগম। তার তিন ভাই কামরান, হিন্দাল ও আকরিকে বিভিন্ন প্রদেশের শাসন ভার দিয়ে তার সাম্রাজ্যকে সুসংগঠিত করেছিল। দিনপানাহ দিল্লিতে তার দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করেন।

  • ১৫৩২ খ্রিঃ দৌরাহর যুদ্ধে মামুদ লােদী ও তার অনুগামী আফগানিদের পরাস্ত করেন। এই সময় শেরশাহ সুরি তার শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • ১৫৩৯ খ্রিঃ চৌসার কাছে শেরশাহ হুমায়ুনকে আক্রমণ করে এবং চৌসার যুদ্ধে হুমায়ুন ভিষণভাবে পরাজিত হয় এবং আগ্রায় ফিরে আসে।
  • ১৫৪০ খ্রিঃ কনৌজ বা বিলগ্রামর যুদ্ধে হুমায়ুন শেরশাহের নিকট পরাজিত হয় এবং পারস্যে পালিয়ে যায়।
  • ১৫ বছর পর ১৫৫৫ খ্রিঃ তিনি পুনরায় ফিরে আসেন এবং ১৫৪৫ খ্রিঃ পারস্য সম্রাটের সহায়তায় কাবুল ও কান্দাহার জয় করেন।
  • ১৫৫৫ খ্রিঃ তার দক্ষ সেনাপতি বৈরাম খাঁর সহায়তায় প্রথম লাহাের অধিকার করেন এবং ওই বছর ২৩ জুলাই শুর রাজা সিকান্দার শুরকে পরাজিত করে দিল্লি ও আগ্রা দখল করে মুঘল সাম্রাজ্যে পুনপ্রতিষ্ঠা করেন। এবং শুর সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। বৈরাম খাঁ ছিল হুমায়ুনের দক্ষ , বিচক্ষণ ও বাধ্য সহায়ক। তিনি ছিলেন ভারত জয়ের প্রকৃত সহায়ক। হুমায়ুন তাকে তার পরিবারের শ্রেষ্ঠ প্রদীপ বলে অভিহিত করেছিলেন।
  • দিল্লি দখলের সাত মাস পর ১৫৫৬ খ্রিঃ পাঠাগারের সিঁড়ি দিয়ে পড়ে হুমায়ুনের মৃত্যু হয়।
  • হুমায়ুনের, বােন গুলবদন বেগম (বৈমাত্রেয়) হুমায়ুন নামা লিখেছিলেন।

আকবর(১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিঃ):

জালালউদ্দিন মহম্মদ আকবর ছিলেন হুমায়ুনের পুত্র, মাতা ছিলেন হামিদাবানু বেগম। তিনি ১৫৪২ খ্রিঃ সিন্ধু প্রদেশের অমরকোটে জন্মগ্রহণ করেন। বৈরাম খাঁর অভিভাবকত্বে মাত্র ১৪ বছর বয়সে কালানাউর এর দায়িত্ব নেন।

  • বৈরাম খাঁর নেতৃত্বে ১৫৫৬ খ্রিঃ দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধে হিমুকে পরাজিত করেন ও দিল্লি পুনরুদ্ধার করে। হিমু ছিল আদিল শাহ শুরির প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপতি। হিমু ছিল দিল্লির শেষ হিন্দু রাজা।
  • ১৫৫৬-১৫৬০ খ্রিঃ পর্যন্ত আকবরের শাসন কার্য পরিচালনা করত বৈরাম খাঁ।
  • ১৫৬২ খ্রিঃ বৈরাম খাঁর মৃত্যু হয়।
  • ১৫৬১ খ্রিঃ তিনি মালব আক্রমণ করেন ১৫৬১ থেকে ৬৪ খ্রিঃ পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলে মালব রাজ বাজ বাহাদুরকে পরাজিত করেন । এই সময় তার সেনাপতি ছিল আদম খান ও পীর মহম্মদ।
  • ১৫৬৪ খ্রিঃ মধ্যপ্রদেশের গড় কাটাঙ্গ আক্রমণ করেন এই সময় রাজা ছিলেন রানি দুর্গাবতী। তিনি চিতােরের শরণাপন্ন হয় কিন্তু তিনি পরাজিত হন। আকবর সম্পর্ক স্থাপনের পদ্ধতিতে রাজ্য জয় করেছিলেন।
  • ১৫৬২ খ্রিঃ তিনি অম্বর আক্রমণ করেন এবং রাজা বিহারিমল তার বশ্যতা স্বীকার করলে তিনি বিহারিমলের কন্যাকে বিবাহ করেন এবং বিহারিমলকে জয়পুরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
  • ১৫৮৪ খ্রিঃ রাজপুত্র সেলিমের সঙ্গে রাজা ভগবান দাসের কন্যাকে বিবাহ দিয়ে তিনি তার সাম্রাজ্য মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন।
  • ১৫৭২ খ্রিঃ গুজরাট আক্রমণ করেন এবং তৃতীয় মুজাফর শাহকে পরাজিত করেন।
  • ১৬০২ খ্রিঃ আকবর বুলন্দ দরওয়াজা ও ফতেপুর সিকরি তৈরি করেন।
  • ১৫৭৬ খ্রিঃ হলদিঘাটের যুদ্ধে রাজা মানসিংহ (বিহারিমলের পৌত্র) ও আসিফ খানের নেতৃত্ব রানা প্রতাপকে পরাজিত করে এবং রাজপুত সাম্রাজ্য দখল করে। রাজা মান সিংহের নেতৃত্বে বাংলা, বিহার ও ওড়িশা দখল করে।
  • ১৫৯১ খ্রিঃ মান্দ্রেশ ও ১৫৯৫ খ্রিঃ বালুচিস্তান , ফান্দাহার তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
  • ১৫৮৬ খ্রিঃ কাশ্মীর ও ১৫৯৩ খ্রিঃ সিন্দ হয় করেন।
  • ১৫৯৯ খ্রিঃ দৌলতাবাদের সুলতানা চাদ বিবিকে পরাজিত করে দাক্ষিণাত্য দখল করে।
  • ১৬০১ খ্রিঃ তার শেষ যুদ্ধ ছিল আসির গড় দুশ জয়।
  • ১৬০৫ খ্রিঃ আকবরের মৃত্যু হয়।
  • তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল কাশ্মীর, সিন্দ, কান্দাহার পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল।

আকবরের নবরত্ন:

আবুল ফজল: 

তিনি ছিলেন ‘আকবরনামা‘ লেখক ও ‘আইন–ই আকবরী‘ এর প্রচারক। তিনি আকবরের হিসাব রক্ষকও ছিলেন। তিনি মুঘল সেনাবাহিনীর সেনানায়ক ছিলেন।

ফৈজি:

তিনি ছিলেন ঐতিহাসিক আবুল ফজলের ভ্রাতা। তিনি ছিলেন আকবরের সভাকবি এবং নবরত্নের একজন। তাকে প্রথম নিযুক্ত করা হয় আকবর পুত্রদের শিক্ষক হিসাবে। তিনি লীলাবতীকে (একটি গণিত বই) ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন।

তানসেন: 

তিনি হলেন রামতনু পান্ডে। তিনি ছিলেন একজন যন্ত্রবাদক। সে সর্বদা বাজনা নিয়েই থাকতেন। তিনি গােয়ালিয়র হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজা রামচন্দ্রের সভায় বাদক হিসাবে আসায় আকবরের দৃষ্টিগােচর হয়। পরে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

রাজা বীরবল: 

বীরবলের আসল নাম মহেশ দাস। তিনি আকবরের সাম্রাজ্যে শাসন কার্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন হাস্যরসিক/বিদুষক কবি এবং সংগীতজ্ঞ। তার জ্ঞানে মুগ্ধ হয়ে সম্রাট তার নবরত্ন সভায় তাকে স্থান দিয়েছিলেন। তার ডাকনাম ছিল বীরবল। আকবর তাকে রাজা উপাধি দিয়েছিলেন।

রাজা টোডরমল: 

টোডরমল ছিল আকবরের রাজস্ব বা অর্থমন্ত্রী। তিনি সাম্রাজ্যের উন্নয়নের জন্য সাম্রাজ্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছিলেন। তার তৈরি করা পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে পরবর্তী মুঘল সম্রাটরা রাজ্য চালনা করেছিলেন। টোডরমল শের শাহের সঙ্গে কাজ করেছিলেন।
১৫৮২ খ্রিঃ আকবর তাকে সেরা উপাধি রাজা ও দেওয়ান–ই–অসরফ দেন।

রাজা মান সিংহ: 

মান সিংহ ছিল অম্বরের রাজা। তিনি আকবরের বশ্যতা স্বীকার করে তার সেনাবাহিনীতে যােগ দেন। তিনি ছিলেন আকবরের প্রধান সেনাপতি। পরবর্তীকালে অম্বরের রাজা বিহারিমলের কন্যাকে আকবর বিবাহ করে এবং তার পুত্র রাজা ভগবান দাসকে আকবরের সহকারী হিসাবে নিযুক্ত করেন। মান সিংহ ছিল আকবরের যুদ্ধ জয়ের মূল কান্ডারী। হলদিঘাটের যুদ্ধ, মেবার জয়, কাবুল অধিকার ও ওড়িশা জয়ের প্রধান ভূমিকায় ছিলেন মান সিংহ।

আবদুল রহিম–খান–ই খান্না: 

আবদুল রহিম ছিলেন একজন কবি ও আকবরের সেনাপতিদের মধ্য অন্যতম। তিনি ছিলেন বৈরাম খাঁর পুত্র। বৈরাম খাঁর মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রীকে আকবর তার দ্বিতীয় স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেন এবং তার শিশুপুত্র আবদুল রহিমকে আপন পুত্র স্নেহে পালন করেন। তিনি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও ভগবান শ্রীকৃয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন।

ফকির আজিয়াও দিন: 

তিনি ছিলেন আকবরের মুখ্য উপদেষ্টা।

মােল্লা দো পিয়জা: 

তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। আকবরের আমলে তার উপদেশ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেত। ১৫৬০-১৫৬২ খ্রিঃ পর্যন্ত তার সাম্রাজ্য যুদ্ধ বিদ্যায় লিপ্ত ছিল এই সময় তিনি ছােটো থাকায় তার ধাতৃমাতা মহাম অঙ্গা বা মামাঙ্গা ছায়াসঙ্গীর মতাে থেকেছে। এবং বৈরাম খাঁ শাসন ভার পরিচালনা করত।

জাহাঙ্গীর(১৬০৫-১৬২৭ খ্রিঃ):

আকবরের পুত্র সেলিম নুরউদ–দিন–মুহম্মদ জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করে সিংহাসনে বসেন। তিনি অধিকাংশ সময় কাটাতেন লাহোরে, যেখানে তিনি দিলখুসা উদ্যান ও ভবন নির্মাণ করেছিলেন।

জাহাঙ্গীরের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ:

খসরুর বিদ্রোহ:

শীঘ্রই তার বড়পুত্র খসরু বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।

  • খসরু বিদ্রোহের পেছনে গুরু অর্জুন দেব সিংহের সহায়তা ছিল।
  • জাহাঙ্গীরের পঞ্চম শিখ গুরু অর্জুন দেবকে হত্যা করা হয়, কারণ তিনি খসরুকে আশ্রয় দিয়েছিলেন।

রানা অমর সিংহের সম্পর্ক:

  • ১৬১৫ খ্রিঃ, রানা অমর সিংহ (মহারানা প্রতাপের পুত্র) জাহাঙ্গীরের বশ্যতা স্বীকার করেন।
  • তার পুত্র করণ সিংহকে মুঘল সাম্রাজ্যের মনসবদার পদে নিযুক্ত করা হয়।

কান্দাহারের হার:

  • ১৬২২ খ্রিঃ, প্যারিস সম্রাট শাহ আব্বাস কান্দাহার দখল করেন।
  • ফলে মুঘলরা কান্দাহার হারায়

নুরজাহান: প্রকৃত ক্ষমতার সম্রাজ্ঞী:

  • জাহাঙ্গীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল শের আফগানির বিধবা স্ত্রী মেহেরুন্নিসার (নুরজাহান) সাথে ১৬১১ খ্রিঃ বিবাহ।
  • নুরজাহানকে বলা হয় ‘পাদশাহ বেগম’, কারণ তিনি মুঘল আমলে প্রথম সম্রাজ্ঞী যিনি নিজ গুণের জন্য ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন।

নুরজাহানের রাজনৈতিক চক্র:

  • তার পিতা মির্জা গিয়াস বেগ, ভ্রাতা আসফ খাঁ ও যুবরাজ খুররমকে নিয়ে চক্র তৈরি করেছিলেন।
  • যুবরাজ খুররমের সঙ্গে তার ভ্রাতুস্পুত্রী মমতাজের বিবাহ দেন।
  • মির্জা গিয়াস বেগকে সাত হাজারি এবং ভ্রাতা আসফকে ছয় হাজারি মনসবদার পদে নিযুক্ত করা হয়।

জাহাঙ্গীরের স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক অবদান:

  • আগ্রাতে ইতিমাদ উদ দৌলার স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়।
  • সেকেন্দার আকবরের সমাধির কাজ শেষ করা হয় জাহাঙ্গীরের আমলে।
  • ঐতিহাসিক ক্যান্টেন হকিন্স (১৬০৮-১১) ভারত ভ্রমণের সময় জাহাঙ্গীরের ৪০০ মনসবদার দেখে তাকে ইংরেজরা ‘খান’ বলেছিলেন।
  • স্যার টমাস রো (১৬১৫-১৯) তার রাজত্বকালে ভারতে এসেছিলেন।
  • এই সময়কে মুঘল আমলে স্বর্ণযুগ বলা হয়।

মৃত্যু:

১৬২৭ খ্রিঃ জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়।

শাহজাহান (১৬২৮–১৬৫৮ খ্রিঃ):

শাহজাহান ছিলেন একজন দক্ষ মুঘল সম্রাট ও শাসক। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী আগ্রা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তর করেন।

সাম্রাজ্যিক চ্যালেঞ্জ ও বিজয়

বিদ্রোহ দমন:

  • রাজত্বের প্রথম দিকে বুন্দেল খন্ডের রাজা জুব্বর সিং বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
  • দাক্ষিণাত্যের শাসক খান জাহান লোদিও বিদ্রোহ করেন।
  • শাহজাহান উভয় বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হন।

সাম্রাজ্য বিস্তার:

  • শাহজাহান তার সাম্রাজ্য বিস্তারে সফল হন।
  • আহমেদনগরবিজয়পুর তার সাম্রাজ্যের বশ্যতা স্বীকার করে।
  • ১৬৩৬ খ্রিঃ গোলকুন্ডা মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার করে।
  • উত্তর-উত্তর-পূর্বে রানা প্রতাপ সিংহের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে শ্রীহট্ট জেলা পর্যন্ত সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ।
  • তার পুত্র ঔরঙ্গজেবকে দাক্ষিণাত্যের সুবেদার নিযুক্ত করা হয়।

নগর পরিকল্পনা ও স্থাপত্য:

  • দিল্লি নগরীর নামকরণ করা হয় শাজাহানাবাদ, এবং আগ্রার নামকরণ করা হয় আকবরাবাদ
  • শাহজাহানাবাদে নির্মিত সুপ্রসিদ্ধ দুর্গ:
    • যমুনা নদীর পূর্বে অবস্থিত
    • চারটি বড় দরজা, দুটি ছোট দরজা, এবং দুটি বুরুদসহ নির্মিত
    • নাম: ‘কিলা–ই–মুবারক’, যা লালকেল্লা নামে পরিচিত
  • ১৮৫৭ খ্রিঃ পর্যন্ত এটি মুঘলদের এবং পরবর্তী রাজাদের রাজধানী ছিল।

শাহজাহানের রাজত্বকাল:

  • তার রাজত্বকালকে মুঘল সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ বলা হয়।

তাজমহল:

তাজমহল হল আগ্রার নিকটবর্তী ভালবাসার স্মৃতি সৌধ, যা নির্মাণ করেছিলেন সম্রাট শাহজাহান

নির্মাণের কারণ:

  • শাহজাহানের প্রিয় পত্নী আর্জুমান্দ বানু বেগমের নাম দেওয়া হয়েছিল মমতাজ
  • তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই সৌধ নির্মাণ করা হয়।
  • ১৬৩১ খ্রিঃ মমতাজ তার চতুর্থ পুত্রের জন্মের সময় মৃত্যু হয়।

নির্মাণকাল ও কারিগরি:

  • নির্মাণে ২২ বছর (১৬৩১–১৬৫৩) সময় লেগেছিল।
  • প্রতি দিনে ২২ হাজার মিস্ত্রি কাজ করতেন।
  • মূল নকশা ও কারিগরি দায়িত্ব পালন করেছিলেন ঈশা খাঁ
  • সাদা মার্বেল পাথরের দেয়ালে কোরানের বাণী লিখেছিলেন আমানত খাঁ মিরজা
  • অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা করেছিলেন মীর আব্দুল করিমমুকরিমল খাঁ

স্থাপত্য গুরুত্ব:

  • এটি মুঘল আমলের সর্বশ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন
  • সাদা মার্বেলের মসজিদ, ময়ূর সিংহাসন এবং স্বর্ণদ্বারণও শাহজাহান নির্মাণ করেছিলেন।

শাহজাহানের শেষ সময়কাল:

  • তার চার পুত্র দারা, সুজা, ঔরঙ্গজেব ও মুরাদ এর মধ্যে সিংহাসন যুদ্ধ/বিদ্রোহ শুরু হয়।
  • জীবনের শেষ সময় দুঃখ ও সংকটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়।

ঔরঙ্গজেব (১৬৫৮–১৭০৭ খ্রিঃ)

সিংহাসন অর্জন ও প্রাথমিক পদক্ষেপ:

  • শাহজাহানের অসুস্থতার পর চার পুত্রদের বিভিন্ন প্রদেশে দায়িত্ব দেওয়া হয়:
    • দারা সিকো – দিল্লি
    • শাহ সুজা – বাংলা
    • মুরাদ বক্স – গুজরাট
    • ঔরঙ্গজেব – দাক্ষিণাত্ম
  • ঔরঙ্গজেব দারাসিকোকে ধর্মাট, সামুগড় ও দেওয়াই-এর যুদ্ধে পরাজিত করেন।
  • ১৬৫৯ খ্রিঃ জানুয়ারিতে সুজাকে খাজোয়ার যুদ্ধে পরাজিত ও হত্যা করেন।

সাম্রাজ্য বিস্তার:

  • ১৬৯০ খ্রিঃ পর্যন্ত ঔরঙ্গজেবের সাম্রাজ্য:
    • পশ্চিমে: কাবুল
    • পূর্বে: চট্টগ্রাম
    • উত্তরে: কাশ্মীর
    • দক্ষিণে: কাবেরী নদী
  • বাংলার শাসক মীহামুল্লা ১৬৬১ খ্রিঃ কুচবিহার দখল করে ‘আলমগীর নগর’ নামে নামকরণ করেন।
  • ১৬৬৩ খ্রিঃ অহোমরাজ জয়ধ্বজ মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার করেন
  • শায়েস্তা খাঁ আরাকান রাজকে পরাজিত করে চট্টগ্রাম এবং মোগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের পরাজিত করে সন্দীপ দখল করেন।

নীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা:

  • ঔরঙ্গজেব উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ‘অগ্রসর নীতি’ অবলম্বন করেন।
  • পরবর্তী বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন মীর জামুল্লা, ঔরঙ্গজেবের মাতুল শায়েস্তা খান
  • ১৬৬৫ খ্রিঃ – সন্দীপ দখল
  • ১৬৬৬ খ্রিঃ – আরাকান রাজ পরাজিত ও চট্টগ্রাম দখল

ধর্ম ও আইন:

  • ঔরঙ্গজেব খাঁটি ইসলামীয় আচরণ প্রচারের জন্য রচনা করেন:
    • ফতাওয়া-ই-আলমগিরি
  • উলেমার উপর নির্ভরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী মুসলিম অভিজাতদের মধ্যে ছিলেন মহাবৎ খাঁ, মীর্জা লারা।

সামরিক অভিযান ও রাজপুতানার যুদ্ধ:

  • ঔরঙ্গজেব শিখদের নবম গুরু তেগবাহাদুরকে হত্যা করেন (১৬৭৫ খ্রিঃ)
    • বিখ্যাত উক্তি: “শিরদিয়া সার না দিয়া”
  • প্রধান যুদ্ধ: মারবাড় ও মেবার রাজ্য
  • দীর্ঘ ত্রিশ বছর রাজপুতানার যুদ্ধে লিপ্ত
  • রাঠোর বীর দুর্গাদাস, মারবাড়ের রাজা যশবন্ত সিংহের অনুচর, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

পরবর্তী মুঘল শাসকগণ (১৭০৭–১৮৫৭ খ্রিঃ):

প্রথম বাহাদুর শাহ (১৭০৭–১৭১২ খ্রিঃ):

  • ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সম্রাটরা মাত্র পুতুলের মতো ছিলেন। প্রকৃত ক্ষমতা ছিল অমলবর্গের হাতে।
  • ঔরঙ্গজেবের তিন পুত্র: মুয়াজ্জম, আজম, কামবক্স ক্ষমতার জন্য ভ্রাতৃদ্বন্দ্বে লিপ্ত হন।
  • মুয়াজ্জম প্রথম বাহাদুর শাহ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন (১৭০৭ খ্রিঃ)।
  • বাহাদুর শাহ শিবাজির পৌত্র শাহুজিকে ১৮ বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেন।
  • মারওয়াড় ও মেবারের স্বাধীনতা স্বীকার, প্রচলিত ‘জিজিয়া’ কর তুলে দেন।
  • ঐতিহাসিক কাফি খাঁ বাহাদুর শাহকে ‘শাহ–ই–বেখব’ আখ্যা দেন।

জাহানদার শাহ (১৭১২–১৭১৪ খ্রিঃ):

  • বাহাদুর শাহের মৃত্যুর পর জাহানদার শাহ অন্য ভাইদের পরাস্ত করে সম্রাট হন।
  • ক্ষমতা প্রাপ্তিতে সাহায্য করেন জুলফিকার খান
  • সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় (আবদুল্লাহ খান ও হুসেন আলি খান) জাহানদার শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করেন।

ফারুকশিয়ার (১৭১৩–১৭১৯ খ্রিঃ):

  • সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের সাহায্যে ফারুকশিয়ার জাহানদারকে হত্যা করে দিল্লির সিংহাসনে বসেন।
  • জুলফিকার খানকে হত্যা করেন।
  • শিখ নেতা বান্দা বাহাদুরকে ১৭১৬ খ্রিঃ মৃত্যুদণ্ড দেন।
  • ১৭১৭ খ্রিঃ ইংরেজ দূত সুরম্যানকে বার্ষিক তিন হাজার টাকার বিনিময়ে বিনাশুল্কে বাণিজ্যের ফরমান দেন।
  • সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় দ্বারা ফারুকশিয়ারকে হত্যা করা হয়।

রফি-উদ-দরজাত ও রফি-উদ-দৌল্লা:

  • রফি-উদ-দরজাত – ১৭১৯ খ্রিঃ ২৮ ফেব্রুয়ারি সিংহাসনে বসান; পরে সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় দ্বারা হত্যা।
  • রফি-উদ-দৌল্লা – ১৭১৯ খ্রিঃ জুনে সিংহাসনে বসান; দ্বিতীয় শাজাহান উপাধি গ্রহণ।

মহম্মদ শাহ (১৭১৯–১৭৪৮ খ্রিঃ):

  • সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের সহযােগিতায় সিংহাসনে বসেন।
  • ১৭২০ খ্রিঃ সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়কে হত্যা করেন।
  • মুঘল সম্রাট নৃত্যে পারদর্শী ছিলেন।
  • ইতিহাসে পরিচিত ‘রঙ্গীলা বাদশাহ’ নামে।
  • হায়দ্রাবাদের নিজাম বংশ, মুরশিদকুলি খাঁ নেতৃত্বে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা ও রোহিলাখন্ড স্বাধীনতা লাভ
  • ১৭৩৯ খ্রিঃ নাদির শাহের ভারত আক্রমণ, কোহিনুর মণি ও ময়ূর সিংহাসনসহ ধনসম্পদ নিয়ে পারস্যে ফিরে যান।

আহম্মদ শাহ (১৭৪৮–১৭৫৪ খ্রিঃ):

  • আফগান শাসক আহম্মদ শাহ আবদালী প্রথম ভারত আক্রমণ।
  • ১৭৫৪ খ্রিঃ মারাঠা নেতা মলহার রাও হোলকার দিল্লি আক্রমণ
  • আহম্মদের উজির ইমাদ–উল–মুলক আহম্মদকে দুই চোখ অন্ধ করে আজিজুদ্দিনকে সিংহাসনে বসান।

আজিজুদ্দিন দ্বিতীয় আলমগীর (১৭৫৪–১৭৫৯ খ্রিঃ):

  • ইমাদ–উল–মুলুকের সহযােগিতায় সিংহাসনে বসেন
  • প্রধান সেনাপতি বলবাস খানকে হত্যা করেন।
  • পরে ইমাদ–উল–মুলুক তাঁকে হত্যা করে, পুত্র যুবরাজ আলি গহ্বরকে সিংহাসনে বসান।

আলি গহবর ‘দ্বিতীয় শাহ আলম’ (১৭৫৯–১৮০৬ খ্রিঃ):

  • ১৭৬৪ খ্রিঃ বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে পরাজিত।
  • ১৮৬৫ খ্রিঃ বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাংলা–বিহার–উড়িষ্যার দেওয়ানী অধিকার ইংরেজদের।
  • ১৮০৩ খ্রিঃ ব্রিটিশরা দিল্লি অধিকার করে।

দ্বিতীয় আকবর (১৮০৬–১৮৩৭ খ্রিঃ):

  • রামমোহন রায়কে ‘রাজা’ উপাধি দেন।
  • তাঁকে মুঘল দূত হিসেবে লন্ডন পাঠান।

দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ (১৮৩৭–১৮৫৭ খ্রিঃ):

  • শেষ মুঘল সম্রাট।
  • ১৮৫৭ খ্রিঃ সিপাহি বিদ্রোহে অংশগ্রহণের অপরাধে রেঙ্গনে নির্বাসিত।
  • পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়।
  • ১৮৬২ খ্রিঃ রেঙ্গনে মৃত্যু।
  • সিপাহি বিদ্রোহে হিন্দুস্তানের সৈন্যরা তাঁকে ‘হিন্দুস্তানের সম্রাট’ ঘোষণা করেন।

মুঘল আমলের দরবারী রাজনীতি:

  • মুঘল আমলে আমির ও ওমরাহদের মধ্যে তিনটি গোষ্ঠী বিদ্যমান:
    • ইরানী
    • তুরানী
    • হিন্দুস্তানী

মুঘল শাসন ব্যবস্থা:

প্রশাসনিক ব্যবস্থা:

  • মুঘল সাম্রাজ্য প্রথমে সুবায় বিভক্ত করা হত।
  • প্রশাসনিক কাঠামো ছিল:
    সুবা → পরগনা → গ্রাম

গুরুত্বপূর্ণ পদ ও দায়িত্বসমূহ:

  • ভকিল – বাবর ও হুমায়ুনের সময় প্রধানমন্ত্রী।
  • উজির – প্রধানমন্ত্রী।
  • দেওয়ান – ভূমি রাজস্ব মন্ত্রক বা বিভাগ।
  • মীর বক্সি – সেনাবাহিনী বিভাগ।
  • মান–ই–সামান – প্রকৃত গৃহ কর্তা।
  • কাজি–উল–কাজাত – বিচার বিভাগ; কাজিকে সাহায্য করত মুফতি
  • সাদর–উস–সাদর – সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মন্ত্রক।
  • মুস্তাফি – লেখক।
  • আমিল – জনসাধারণের বিচারক এবং বিচারব্যবস্থা সহায়ক।
  • কুয়ানুনগো – প্রধান হিসাব রক্ষক।
  • লাম্বারদার – গ্রাম প্রধান।

সুবা ও রাজস্ব ব্যবস্থা:

  • আকবরের সময় ১৫ টি সুবা ছিল।
  • ঔরঙ্গজেবের আমলে সুবার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২১ টি হয়।
  • জমি বিভক্ত করা হতো:
    • খালিমা – শস্যের জমি
    • জাগির – উন্নত শস্যের জমি
    • ইনাম – উন্নত জমি ও বাসস্থান

মুঘল সাম্রাজ্য সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর:

পানিপথের যুদ্ধ:

  1. কোন যুদ্ধের মাধ্যমে ভারতের সুলতানী সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল?
    উঃ- পানিপথের প্রথম যুদ্ধ।
  2. প্রথম পানিপথের যুদ্ধ কখন হয়?
    উঃ- ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে।
  3. ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবর কাকে পরাজিত করেন?
    উঃ- ইব্রাহিম লোদী।
  4. কোন যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদী বাবরের কাছে পরাজিত হয়?
    উঃ- পানিপথের প্রথম যুদ্ধে।
  5. বাবর দিল্লির সিংহাসন অধিকার করেন কখন?
    উঃ- ১৫২৬ সালে।
  6. ভারতের কোন যুদ্ধে প্রথম কামানের ব্যবহার হয়?
    উঃ- পানিপথের প্রথম যুদ্ধে।
  7. পানিপথ কোথায় অবস্থিত?
    উঃ- দিল্লির অদূরে।
  8. পানিপথের যুদ্ধ কোন নদীর তীরে হয়?
    উঃ- যমুনা নদীর তীরে।
  9. পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ কোন সালে সংঘটিত হয়?
    উঃ- ১৫৫৬ সালে।
  10. কোন যুদ্ধে আকবর দিল্লি জয় করেন?
    উঃ- পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে।
  11. পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ হয় কত সালে?
    উঃ- ১৭৬১ সালে।
  12. তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধে কে কাকে পরাজিত করে?
    উঃ- আহমদ শাহ আবদালি মারাঠাদিগকে।
  13. মারাঠা শাসকের উপাধি কি ছিল?
    উঃ- পেশোয়া।

মুঘল সম্রাট ও রাজনীতি:

  1. ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে?
    উঃ- বাবর।
  2. সম্রাট শাহজাহান মুঘল বংশের কততম শাসক?
    উঃ- পঞ্চম।
  3. মুঘল সম্রাট আকবরের পিতামহ কে ছিলেন?
    উঃ- বাবর।
  4. শাজাহানের কনিষ্ঠ পুত্র কে?
    উঃ- মুরাদ।
  5. শেষ মুঘল সম্রাটের নাম কি?
    উঃ- দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ।
  6. মুঘল সম্রাট বাবরের পুরো নাম কি?
    উঃ- জহিরউদ্দীন মুহম্মদ বাবর।
  7. ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভারতের কোন প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল?
    উঃ- উত্তর প্রদেশ।
  8. বাবরি মসজিদ ভারতবর্ষের কোন শহরে অবস্থিত ছিল?
    উঃ- অযোধ্যা।
  9. শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহের কবর কোথায়?
    উঃ- ইয়াঙ্গুন।
  10. দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে নির্বাসিত করা হয় কোথায়?
    উঃ- রেঙ্গুনে।
  11. কোন বিদেশি রাজা ভারতের কোহিনুর মণি ও ময়ূর সিংহাসন লুট করেন?
    উঃ- নাদির শাহ।
  12. নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করেছিলেন কোন সালে?
    উঃ- ১৭৩৯ সালে।
  13. আলমগীরনগর কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
    উঃ- কুচবিহার।
  14. শাহজাহানের কন্যা জাহান আরা কোন ভ্রাতাকে সমর্থন করেছিলেন?
    উঃ- দারা।

মুঘল স্থাপত্য ও সংস্কৃতি:

  1. ‘তাজমহল’ কে প্রতিষ্ঠা করেছেন?
    উঃ- শাহজাহান।
  2. ‘ময়ূর সিংহাসন’ এর নির্মাতা কে?
    উঃ- শাহজাহান।
  3. আগ্রার দুর্গের নির্মাতা কে?
    উঃ- সম্রাট শাহজাহান।
  4. মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সমাধি কোথায়?
    উঃ- লাহোরে।
  5. তাজমহল কোন শতাব্দীতে তৈরি হয়েছিল?
    উঃ- সপ্তদশ শতাব্দী।
  6. যে মহিলার সমাধির উপর তাজমহল নির্মিত, তিনি কে?
    উঃ- মমতাজ।
  7. ভারতের যে সম্রাটকে ‘আলমগীর’ বলা হতো?
    উঃ- ঔরঙ্গজেব।
  8. কখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়?
    উঃ- ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২।

বাংলা ও প্রশাসন:

  1. কোন মুঘল সম্রাট বাংলার নাম দেন ‘জান্নাতবাদ’?
    উঃ- হুমায়ুন।
  2. কোন মুঘল সম্রাট প্রথম বাংলা জয় করেন?
    উঃ- আকবর।
  3. কোন মুঘল সম্রাটের সময় সাম্রাজ্যের সর্বাপেক্ষা বেশি বিস্তার ঘটে?
    উঃ- আকবর।
  4. বাংলায় মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে?
    উঃ- আকবর।
  5. কখন সম্রাট আকবর বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন?
    উঃ- ১৫৭৬ সনে।
  6. ‘দীন-ই-ইলাহী’ ধর্ম প্রবর্তন করেন কে?
    উঃ- সম্রাট আকবর।
  7. বাংলায় কোন আমলে গজল ও সুফি সাহিত্য সৃষ্টি হয়?
    উঃ- মুঘল আমলে।
  8. টোডরমলের নাম কোন সংস্কারের সঙ্গে জড়িত?
    উঃ- রাজস্ব সংস্কারের সঙ্গে।
  9. টোডরমর কে ছিলেন?
    উঃ- আকবরের অর্থমন্ত্রী।
  10. ‘জিজিয়া’ কি ছিল?
    উঃ- অমুসলমানদের উপর ধার্য সামরিক কর।
  11. সম্রাট আকবরের সমাধি কোথায়?
    উঃ- সেকান্দ্রা।
  12. বাংলা সনের প্রবর্তক কে?
    উঃ- সম্রাট আকবর।
  13. বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ চালু করেছিলেন কে?
    উঃ- সম্রাট আকবর।

Protijogita.in শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে তৈরি। আমি সুকান্ত দাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে এম.এ করেছি এবং শিক্ষকতা করি। এই ওয়েবসাইটে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রশ্নোত্তর, মক টেস্ট, এবং দরকারি অধ্যয়ন সামগ্রী প্রদান করা হয়।

Post Comment

error: Content is protected !!